ম্যাসেজ অব স্বামীজী | NARODNIK

 

ম্যাসেজ অব স্বামীজী
কলমে - এহসান আহমেদ খান



ম্যাসেজ অব স্বামীজী, স্বামীজীর কর্মযোগ বইয়ের আলোকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা, স্বামী বিবেকান্দের শিক্ষা আসলে কি? উনবিংশ শতাব্দীতে শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস ভারতবর্ষে এক আধ্যাত্মিক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেন।তিনি মূলত প্রাচীন ভারতীয় যে মিথোলজি,পৌরণিক কাহিনী, সেগুলোর থেকে আসলে কি বাস্তবিক শিক্ষা পাওয়া যায় এবং সর্বোপরি আধ্যাত্মিকতা চর্চার মূলমন্ত্র যে সৎকর্ম এবং জাগতিক মোহ থেকে মুক্তি লাভ করে মানব সমাজের জন্য নিবেদিত জীবন পার করা এই শিক্ষা তিনি দিয়েছিলেন। স্বামী বিবেকান্দ ছিলেন উনার একজন শিষ্য। স্বামীজীর শিক্ষা ছিল কর্মশীলতা, প্রকৃত ধর্ম যে জাগতিক মোহ,মায়া,হিংসা,অহংকার থেকে মুক্তি লাভ করে ধ্যান,কর্ম করে মঙ্গল কামনা করা এইটাই স্বামীজীর শিক্ষা।স্বামীজীর দর্শন এর অনুসরণ যদি কেউ করতে চান তাকে হিন্দু বা মুসলিম, আস্তিক বা নাস্তিক, বিজ্ঞান বা লিবারেল আর্টস বা যেকোন শ্রেণীর মানুষ হলেই চলবে।রামকৃষ্ণ পরমহংস যেমন বলেছিলেন, যত মত তত পথ। 


স্বামীজীর কর্মযোগ বইয়ে উনার একটি বিশেষ উক্তি হলো, " জগতের উপকার করিয়া ভাবিও না জগত তুমার কাছে কৃতজ্ঞ হইয়াছে,বরং জগত তোমাকে তাহার উপকার করিবার সুযোগ দিয়া তোমাকে তাহার নিকট কৃতজ্ঞ করিয়াছে"। তিনি এই বইয়ে বেশ কিছু পৌরণিক গল্প এর বর্ণনা দেন যার প্রতিটির সারমর্ম ছিল এই যে কর্মের দ্বারাই প্রতিটি জীবন পূর্ণতা লাভ করে।একটি গল্প ছিল এমন এক সন্যাসি তিনি একবার তপস্যা শেষে দেখলেন যে এক ব্যাধ খুবই তীক্ষ্ণতার সাথে একটি পাখি শিকার করেছে।তিনি অবাক হয়ে দেখলেন।খুবই পারদর্শী। তিনি বুঝতে পারলেন যে দীর্ঘদিন চর্চার মাধ্যমে ব্যাধ তার কাজটাকে একটা শক্তিতে রুপান্তর করেছে।এইবার সন্যাসি আবার চলছেন মাঝপথে তার ভীষণ তেষ্টা পেল।তিনি একটি বাড়ির সামনে গেলেন এবং জলের জন্য হাক দিবেন ঠিক এমন সময় গৃহীনী হাজির জলল হাতে! তিনি তো ডাক দেননি।তিনি গৃহীনীকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিভাবে বুঝলে আমি তৃষ্ণার্ত? উত্তরে গৃহীনী বলেছিল,গুরুজি আপনি সন্যাসব্রত গ্রহণ করে দীর্ঘ সাধনা করে দীক্ষা লাভ করেছেন আর আমি দীর্ঘজীবন সংসারধর্ম পালন করে জাগতিক বাস্তবিক জ্ঞান অর্জন করেছি আর আমার গৃহের সামনে আপনার পদচারণা অনুভব করেছি আর অনুধাবন করেছি আপনি তৃষ্ণার্ত।এই গল্পের সারমর্ম এ স্বামীজী এই কথাই বলেছিলেন, কর্ম,তপস্যা,সংসার ধর্ম মানুষ যাই করুক না কেন, একাগ্রতা, নিষ্ঠা থাকলে আর একদিন এই নিবেদন আর কর্ম তাকে মহান বানাবে। তিনি এই বইয়ে লিখেছেন, "জগতে বিচরণ কর, কিন্তু আসক্ত হইয় না।" মানে তিনি নির্বাণ লাভের কথা বলছেন যেমনটা বলেছিলেন বৌদ্ধ। 


এই বইটি ভারতীয় উপমহাদেশ এর প্রতিটি তরুণেরই পড়া উচিৎ।স্বামীজীর ভক্তি মানে এই নয় যে বারবার উনাকে স্মরণ করা, বরং তার মহাত্মাকে অনুসরণ করে কর্ম,নিষ্ঠা আর ত্যাগী জীবনযাপন করে দেশ সমাজ মানুষের কল্যাণ করলেই তবে এটাই হবে স্বামীজীর প্রতি প্রকৃত ভক্তি। " জীবে দয়া করে যেইজন,সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।" - স্বামী বিবেকান্দ

Post a Comment

0 Comments